মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::
আজ ভয়াল সেই ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ ইংরেজীর এই দিনে কক্সবাজারসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে যেন কেয়ামত নেমে এসেছিল। সেই প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ভয়াল স্মৃতি আজো অজর নয়নে কাঁদায় পুরো উপকূলবাসীকে। সেই সাথে স্বজন হারানোর বেদনা উপকূলবাসী এখনো ভূলেনি। এই দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াল ও শোকাবহ। সেই প্রলংয়কারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তান্ডবে কক্সবাজারের আট উপজেলা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী-আনোয়ারাসহ উপকূলের হাজার হাজার গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে কয়েক লাখ বণি-আদমের মৃত্যু হয়েছিল। তি হয়েছিল কোটি কোটি টাকার সম্পদের। সেই অপূরনীয় তির কবল থেকে উপকূলের মানুষ এখনো কুলিয়ে উঠতে পারেনি। দু:সহ স্মৃতি এখনো কাঁদায় মাতা-পিতা হারানো সন্তানদের, সন্তান হারানো পিতা-মাতার, স্বামী হারা স্ত্রী, স্ত্রী হারা স্বামী, ঘরবাড়ি হারা মানুষদের। সে বেদনায় চোখ এখনো অশ্র“সজল হয়ে যায় ভয়াল স্মৃতি থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর।
জানা যায়, কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকা পেকুয়া, চকরিয়া, টেকনাফ-উখিয়া, ঈদঁগাও, মহেশখালী-কুতুবদিয়া, চকরিয়া-বদরখালী-মগনামা-উজানটিয়া, চট্রগ্রামের বাশখালী-আনোয়ারার বিস্তীর্ণ এলাকায় সেই ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকারী ঘূর্নিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড গ্রামের বসত বাড়ীর ব্যাপক য়তিসহ মারা গিয়েছিল কয়েক লাধিক মানুষ।
ঘূর্ণিঝড় প্রত্যদর্শী পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আশরাফুল মজিদ সেই দিনের ভয়াল স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে অশ্র“জলে এ প্রতিবেদককে বলেন, আগেই থেকে আবহাওয়ার সর্তকবানী ছিল ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। কিন্ত গ্রাম অঞ্চল হওয়ায় মানুষ ঘূণিঝড় সম্পূর্কে সচেতন ছিলনা। যার কারণে ১০নং সর্তক সংকেত চলার পরও মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপথ স্থানে কেউ সরেনি। সরায়নি গরু-ছাগল থেকে শুরু করে বিবিধ আসবাপ পত্র। যার কারণে বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী হওয়ায় পেকুয়া-চকরিয়াসহ পুরো উপকূল মুহুর্তের মধ্যেই লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সেই ২৯ এপ্রিলে আমি হারিয়েছি মাতা-পিতা, ভাই-বোন, ও বহু আত্বীয় স্বজনদের। ঘরবাড়ী হারিয়ে খোলা আকাশের নিছে বসবাস করি মাসের পর মাস। সেই শোক এখনো কাটিয়ে ওঠতে পারেনি।
প্রলয়ংকারী সেই ঘূর্ণিঝড়ে চকরিয়া বদরখালী চিংড়ি প্রজেক্ট থেকে নিখোজ হওয়া পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের সবুজ পাড়া এলাকার হাজ্বি জাহাঙ্গীর আলমের পুত্র মোহাম্মদ শাহাজানের সাথে। সেই ভয়াল স্মৃতির কথা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, তখন আমি ৪র্থ শ্রেনীতে। সেই দিন চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় এলাকা বদরখালীর ৩নং ব¬কের চিংড়ী প্রজেক্টে অবস্থান করার কারণে জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়ে আমার পিতা এখনো ফিরে আসেনি। বাবা কি মারা গেছে না কি বেঁচে আছে তা আমরা এখনো জানিনা। আমাদের পরিবারের কেউ বিশ্বাস করতে পারছেনা তিনি আমাদের মাঝে নেই। কারণ আমি বা আমার পরিবারের কেউ তার লাশ দেখি নাই আজো। বাবার সাথে একই প্রজেক্টে থাকত ৯১’র পরবর্তী সেই জীবিত আবুল হাশেম সৌদি প্রবাসী হয়ে আজো আসেনি গ্রামের বাড়িতে। তার সাথে যোগাযোগ করতে পারলে হয়তোবা বাবা মারা গেছে নাকি বেচে আছে সেই সংবাদটা ফেতাম । মা এখনো বাবার কথা বলে নিরবে চোখের জল ফেলে। একই স্মৃতির কথা বলেছেন উপকূলের অনেকেই।
প্রতি বছর এই দিনে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্নিঝড়ে নিহতদের স্মরণে শোকসভা, মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। দেশের গণমাধ্যম এই দিনে বিশেষ স্মরণানুষ্টানমালা প্রচার করে থাকে।
পাঠকের মতামত: